সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুহম্মাদ নুরুল হুদা

এই কবিতার পালক
বিশ্ব সৃষ্টিরও বহু আগে খসে পড়েছিল এই কবিতার পালক; তারপর এই ভীরু কবিতাটিও ঘুমিয়ে
পড়েছিল এক মায়াসুন্দরীর কটাক্ষহেলনে; আজ জেগে উঠলো তোমার আস্কারায়। এই মুহুর্তে তোমার
আমার বয়স সময়ের সমান। ভাগ্যিস, আমাদের দেখা হয়েছিল কখনো মায়া সভ্যতায়, কখনো এই
নবান্নের ঢাকায়।
২.
দেখা তো হলোই; তুমি বললে, কথা হোক; আমি কথাগুলোকে রাঙতা মারতে উদ্যত হলাম। তুমি বললে,
অত কিছু কি দরকার? বাঁশপাতার বাঁশিতে ফুঁ দিলেই তো হেসে উঠবে তোমার প্রশ্ন, আমার উত্তর।
পালক তো হেসেই গুটিশুটি, বাঁশঝাড়ের আড়ালে গিয়ে তোমার প্রশ্ন, আমার উত্তর বাজিয়ে চলেছে
লালাবাঁশি।
৩.
আমি ঢুকতে চাইলে তুমি বাঁধা দিলে না, কিন্তু যখন খুঁড়তে উদ্যত হলাম, তুমি বললে আমি তো
পলল্ভূমি নই; সমুদ্রতল। বালকের বেশে হেসে উঠল পালক। আমি যখন ডুবুরির পোশাকে প্রস্তুত,
তুমি বললে, আমিও মহাকর্ষে নিরপেক্ষ সাঁতার জানি, অগত্যা ছায়াপথ ছেড়ে আমরা দুজন কায়াপথের
উদ্দেশে উড়ালু সেজেছি।
৪.
পালক ঘুরছে শুন্যে, তাকে দেখে ফেলল এক অনার্য বালক; উড়তে উড়তে যখন তার ঘাড়ে এসে
পড়লো, বালক তাকে নিয়ে আদর করে ঘর সাজালো।
এই পালকটি তোমার ডানার; প্রতিবার গ্রহণ-বর্জনের পালা এলে শিশির বীর্জের মত টুপটাপ খসে যায়
কখনো অপরাজেয় হিরোসীমায়, কখনো মহাশূন্যে ছায়া সভ্যতায়।
৫.
আমি ছেড়ে দেবো দেহের বাঁধন, তুমিও তোমার, তারপর আলপথ ছেড়ে  রাজপথ ছেড়ে সোজাসাপ্টা ঘর
তুলবো নীলিমার ছাদে। আমরা যখন হাত বাড়াবো পরস্পরের গোলাপজোড়ায়, দেওয়াল-ফুড়ে জেগে-ওঠা
বটের চারায় লটকে থাকবে সবুজ পালক; একঝাঁক চড়ুই এসে শুরু করবে ভাষাবন্যা।
তখন আমরা নামতে থাকবো নিচে, তখন আমরা ঘামতে থাকবো দরিয়ানগর বিচে; তাই তো জন্ম পেরিয়ে
মৃত্যু পেরিয়ে আমি রচনা করেছি আমার ভিতর, তুমি রচনা করেছো তোমার ভিতর জন্ম-জন্মান্তরের
কবর।
৬.
মুখ আর বুকের বাধন ছেড়ে আমরা নেমে পড়েছি সাধন যজ্ঞে; অন্ধকার ভেদ করে রাশি রাশি
তারাবাতি। তার আলোয় আমরা পরস্পরের ভিতর সুপ্ত; আমরা পরস্পরের ভিতর মুক্ত।
৭.
পালক কি উড়ে গেলো? পালক কি ঘুরে এলো? পালক তোমাকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে শস্যদানা হয়ে
ছড়িয়ে পড়লো; তিনভূবনের তেপান্তরে সে কি তার ডাকাডাকি তাকে খুটে খেলো জগৎপাখি।

------ ***** ------


মন্তব্যসমূহ

  1. হায় ! জীবনকে এত সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন !
    সত্যি আমি মুগ্ধতায় ঘামতে ঘামতে কবিতার শেষ পর্যন্ত ছুয়ে গেলাম..

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

বাংলা সাহিত্য : জনপ্রিয় কবিতাগুলো পড়ুন

শুভাগত রায়

audio testing  শুনুন কবি-কন্ঠে কবিতা পাঠ : সুসং দুর্গাপুর রোদ এসে পড়ে সোনা ধানখেতে সারি সারি কত আম কাঁঠালের গাছ সোনালী রোদ মাখে নদীর জল আদুরে জল স্ফটিক স্বচ্ছ কাঁচ।

কাজল সেনের কবিতা

রাতের শেষ ট্রেন কাজল সেন ঠান্ডাঘরে বসে টানা কমপিউটারে কাজ করে যারা নির্ঘাত তাদের ঘাড়ব্যথা হাতব্যথা স্পন্ডেলাইটিস অথচ আমাদের ক্লাবের তুখোড় সেন্টার ফরোয়ার্ড গান্ধী মন্ডল সারাটা মাঠ জুড়ে ড্রিবলিং ট্যাকেলিং পাসিং খেলে আজ অষ্টিও আর্থারাইটিসে পুরোপুরি শয্যাশায়ী ইদানীং আর কোনো উৎপাতেই জাগে না মন ঘোড়ার দানাপানি থেকে টয়েটো গাড়ির পেট্রল উন্মুক্ত ডাইনিং টেবিলে রাখা পিৎজা বা বার্গার রাতে স্বল্পাহারের পর স্বল্প মদ্যপান দোয়াতের কালি আজকাল আর কেউ ব্যবহার করে না ডটপেনে চিঠি লেখাও বন্ধ হয়ে গেছে বহুদিন সেই যে কবে কতদিন আগে গোলপোস্টে শেষবারের মতো দাঁড়িয়েছিলেন দীর্ঘদেহী পিটার থঙ্গরাজ আর রঞ্জিক্রিকেটে শূন্য রানে ক্যাচ তুলে শেষবারের মতো কীনান স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে ফিরেছিলেন পঙ্কজ রায় আর তো হবে না এ জীবনে নতুন পয়সার লেনদেন শুধু প্রতীক্ষায় আছি কবে টাটানগর ছেড়ে রওয়ানা হবে রাতের শেষ ট্রেন

বিভীষণ মিত্রের কবিতা

বিভীষণ মিত্রের কবিতা পুনর্জন্ম বিভীষণ মিত্র আর একবার যদি জন্মাতে পারি, নতুন করে ভালবাসবো তোমাকে। বিভক্ত পথ ছেড়ে আবার চলব একই পথে, যদি তুমি ফিরে আসো ভুল গুলো ভুলে, আকাশের ওপার থেকে মেঘ ছুঁয়ে বৃষ্টি নামাব। জোনাকির ক্ষুদ্র আলো থেকে চাঁদের বৃহৎ জ্যোৎস্না নামাব। নবজাতকের মত পাপশূন্য হয়ে - তোমার মুক্ত হাতে-হাত রাখব। আর একবার যদি জন্মাতে পারি, তোমায় ভালবেসে বাঁচার মত বাঁচব। মোহনা হয়ে নদী,নদী হয়ে সাগর নামাব। সাগরের সুনীল জলরাশি হয়ে তোমার নগ্ন পা ছোঁব। সেই সিক্ত পায়ের শিহরণে- তোমার শিরা-উপশিরায় জানাবো আমার ভালবাসার কথা। যদি ভালবাসি এ কথা বল আমাকে ভুল করে, পরজনমে কৃতদাস হব তোমার ভালবাসার ছায়া তলে।