এই কবিতার পালক
বিশ্ব সৃষ্টিরও বহু আগে খসে পড়েছিল এই কবিতার
পালক; তারপর এই ভীরু কবিতাটিও ঘুমিয়ে
আমার বয়স সময়ের সমান। ভাগ্যিস, আমাদের দেখা হয়েছিল কখনো মায়া সভ্যতায়, কখনো এই
নবান্নের ঢাকায়।
২.
দেখা তো হলোই; তুমি
বললে, কথা হোক; আমি কথাগুলোকে রাঙতা
মারতে উদ্যত হলাম। তুমি বললে,
অত কিছু কি দরকার? বাঁশপাতার বাঁশিতে ফুঁ দিলেই তো হেসে উঠবে তোমার প্রশ্ন, আমার উত্তর।
পালক তো হেসেই গুটিশুটি, বাঁশঝাড়ের আড়ালে গিয়ে তোমার প্রশ্ন, আমার উত্তর বাজিয়ে চলেছে
লালাবাঁশি।
৩.
আমি ঢুকতে চাইলে তুমি বাঁধা দিলে না, কিন্তু যখন খুঁড়তে উদ্যত হলাম, তুমি
বললে আমি তো
পলল্ভূমি নই; সমুদ্রতল।
বালকের বেশে হেসে উঠল পালক। আমি যখন ডুবুরির পোশাকে প্রস্তুত,
তুমি বললে, আমিও
মহাকর্ষে নিরপেক্ষ সাঁতার জানি, অগত্যা ছায়াপথ ছেড়ে আমরা
দুজন কায়াপথের
উদ্দেশে উড়ালু সেজেছি।
৪.
পালক ঘুরছে শুন্যে, তাকে দেখে ফেলল এক অনার্য বালক; উড়তে উড়তে যখন তার
ঘাড়ে এসে
পড়লো, বালক
তাকে নিয়ে আদর করে ঘর সাজালো।
এই পালকটি তোমার ডানার; প্রতিবার গ্রহণ-বর্জনের পালা এলে শিশির বীর্জের মত টুপটাপ
খসে যায়—
কখনো অপরাজেয় হিরোসীমায়, কখনো মহাশূন্যে ছায়া সভ্যতায়।
৫.
আমি ছেড়ে দেবো দেহের বাঁধন, তুমিও তোমার, তারপর আলপথ ছেড়ে রাজপথ ছেড়ে সোজাসাপ্টা ঘর
তুলবো নীলিমার ছাদে। আমরা যখন হাত বাড়াবো
পরস্পরের গোলাপজোড়ায়, দেওয়াল-ফুড়ে জেগে-ওঠা
বটের চারায় লটকে থাকবে সবুজ পালক; একঝাঁক চড়ুই এসে শুরু করবে ভাষাবন্যা।
তখন আমরা নামতে থাকবো নিচে, তখন আমরা ঘামতে থাকবো দরিয়ানগর বিচে; তাই তো জন্ম পেরিয়ে
মৃত্যু পেরিয়ে আমি রচনা করেছি আমার ভিতর, তুমি রচনা করেছো তোমার ভিতর জন্ম-জন্মান্তরের
কবর।
৬.
মুখ আর বুকের বাধন ছেড়ে আমরা নেমে পড়েছি সাধন
যজ্ঞে; অন্ধকার ভেদ করে রাশি রাশি
তারাবাতি। তার আলোয় আমরা পরস্পরের ভিতর সুপ্ত; আমরা পরস্পরের ভিতর মুক্ত।
৭.
পালক কি উড়ে গেলো? পালক কি ঘুরে এলো? পালক তোমাকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে
শস্যদানা হয়ে
ছড়িয়ে পড়লো; তিনভূবনের
তেপান্তরে সে কি তার ডাকাডাকি — তাকে খুটে খেলো জগৎপাখি।
------ ***** ------
হায় ! জীবনকে এত সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন !
উত্তরমুছুনসত্যি আমি মুগ্ধতায় ঘামতে ঘামতে কবিতার শেষ পর্যন্ত ছুয়ে গেলাম..