সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শুভাগত রায়

audio testing
 শুনুন কবি-কন্ঠে কবিতা পাঠ :
সুসং দুর্গাপুর




রোদ এসে পড়ে সোনা ধানখেতে

সারি সারি কত আম কাঁঠালের গাছ

সোনালী রোদ মাখে নদীর জল

আদুরে জল স্ফটিক স্বচ্ছ কাঁচ।


আমাদের গ্রাম রোদ-জল মেখে বাঁচে

আমাদের গ্রাম সোমেশ্বরীর গায়ে

কতবার হেঁটে গেছি আমি আর রহমান

সে পথে কতবার হেঁটে গেছি দুজনায়।


গোপাট ধরে ফিরে গেছে রাখাল ছেলে

তাঁর গায়ে লেগে গোধূলির ধুলো যত

আমাদের গ্রাম সুসং দুর্গাপুর

আমাদের গ্রাম ছবির বইয়ের মত।


আলপথ যেত গোয়াল পাড়া ধরে

পাশাপাশি যেত গোপাল, তালেব

সেই পথ ধরে সন্ধ্যার উলুধ্বনি

সেই পথ ধরে আজান মাঘরেব্।


ধানখেত গেল কালো কালো ছাই হয়ে 

মজা খালে আটকে পড়ল ভেলা

আমাদের গ্রাম জ্বলে গেল একদিনে

আলপথ ধরে ঘনালো কালবেলা।


বাড়ির চালে তখনও লাউয়ের মাচা

পুকুরঘাঠে দুপুরের এঁটো থালা

রহমান ছুটে বাড়ীর দরজায়

"বাঁচতে হলে পালা, শিগগির পালা"


পড়ে রইল একলা সুপুরি গাছ

উঠোনে ছড়ানো কাক-শালিকের দানা

ফাঁকা ঘর, একা কেঁদে কেঁদে ঘোরে

ফেলে আসা একলা বিড়াল ছানা।


সেই পথ-ঘাট, সেই নদী জল

আরও কত মাঠ ডিঙোলাম

আজন্ম চেনা সোমেশ্বরী 

আজন্ম চেনা আমাদের গ্রাম।


মা-বাবা দুই বোন সাথে

হেঁটে যাই দূর আরও আরও দূরে

আমাদের মত আরও কত লোক হাঁটে

আমরা যাচ্ছি কাঁটাতার পার করে। 


আধপেটা কেউ, কেউ চলে অনাহারে

ধূলোয় লোটায় ছিন্ন মলিন বেশ

আমাদের আর ঘর নেই কোন

আমাদের কাঁটাতার নামে দেশ।


কার বাবা নেই হয়ে গেল

কার মেয়ে হারাল রাস্তায়

এক বোন নিল রাস্তার ধুলোবালি 

এক বোন নিল দাঙ্গায়।


কাঁটাতার পেরিয়ে আমরা আসি

পেছনে পড়ে বাড়ি ঘর গ্রাম পাড়া

আমাদের নাম নেই আর কোন

আমাদের শুধু পরিচয় দেশছাড়া।


মরে বেঁচে আরও অজস্র যন্ত্রণাতে

আমাদের দেহ-মন পুড়ে খাক্

আমাদের শুধু রক্ত বিনিময়ে 

সন্ততিরা দুধে ভাতে থাক।

 

কারা তাঁরা, কী নাম ছিল

কাঁটাতারে এসে নাম বদলে যায়

আমাদের পিতৃপুরুষেরাই বারবার

সেই জন্ম থেকে এই জন্মে জন্মায়।


দেশছাড়া হওয়া দেখিনি আমরা

জানিনি কাঁটাতার কত দূর

আমার  বাড়ির উঠোন থেকে

হেঁটে গেলে কতটা, সুসং দুর্গাপুর?


মন্তব্যসমূহ

বাংলা সাহিত্য : জনপ্রিয় কবিতাগুলো পড়ুন

কাজল সেনের কবিতা

রাতের শেষ ট্রেন কাজল সেন ঠান্ডাঘরে বসে টানা কমপিউটারে কাজ করে যারা নির্ঘাত তাদের ঘাড়ব্যথা হাতব্যথা স্পন্ডেলাইটিস অথচ আমাদের ক্লাবের তুখোড় সেন্টার ফরোয়ার্ড গান্ধী মন্ডল সারাটা মাঠ জুড়ে ড্রিবলিং ট্যাকেলিং পাসিং খেলে আজ অষ্টিও আর্থারাইটিসে পুরোপুরি শয্যাশায়ী ইদানীং আর কোনো উৎপাতেই জাগে না মন ঘোড়ার দানাপানি থেকে টয়েটো গাড়ির পেট্রল উন্মুক্ত ডাইনিং টেবিলে রাখা পিৎজা বা বার্গার রাতে স্বল্পাহারের পর স্বল্প মদ্যপান দোয়াতের কালি আজকাল আর কেউ ব্যবহার করে না ডটপেনে চিঠি লেখাও বন্ধ হয়ে গেছে বহুদিন সেই যে কবে কতদিন আগে গোলপোস্টে শেষবারের মতো দাঁড়িয়েছিলেন দীর্ঘদেহী পিটার থঙ্গরাজ আর রঞ্জিক্রিকেটে শূন্য রানে ক্যাচ তুলে শেষবারের মতো কীনান স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে ফিরেছিলেন পঙ্কজ রায় আর তো হবে না এ জীবনে নতুন পয়সার লেনদেন শুধু প্রতীক্ষায় আছি কবে টাটানগর ছেড়ে রওয়ানা হবে রাতের শেষ ট্রেন

বিভীষণ মিত্রের কবিতা

বিভীষণ মিত্রের কবিতা পুনর্জন্ম বিভীষণ মিত্র আর একবার যদি জন্মাতে পারি, নতুন করে ভালবাসবো তোমাকে। বিভক্ত পথ ছেড়ে আবার চলব একই পথে, যদি তুমি ফিরে আসো ভুল গুলো ভুলে, আকাশের ওপার থেকে মেঘ ছুঁয়ে বৃষ্টি নামাব। জোনাকির ক্ষুদ্র আলো থেকে চাঁদের বৃহৎ জ্যোৎস্না নামাব। নবজাতকের মত পাপশূন্য হয়ে - তোমার মুক্ত হাতে-হাত রাখব। আর একবার যদি জন্মাতে পারি, তোমায় ভালবেসে বাঁচার মত বাঁচব। মোহনা হয়ে নদী,নদী হয়ে সাগর নামাব। সাগরের সুনীল জলরাশি হয়ে তোমার নগ্ন পা ছোঁব। সেই সিক্ত পায়ের শিহরণে- তোমার শিরা-উপশিরায় জানাবো আমার ভালবাসার কথা। যদি ভালবাসি এ কথা বল আমাকে ভুল করে, পরজনমে কৃতদাস হব তোমার ভালবাসার ছায়া তলে।