রোদ এসে পড়ে সোনা ধানখেতে
সারি সারি কত আম কাঁঠালের গাছ
সোনালী রোদ মাখে নদীর জল
আদুরে জল স্ফটিক স্বচ্ছ কাঁচ।
আমাদের গ্রাম রোদ-জল মেখে বাঁচে
আমাদের গ্রাম সোমেশ্বরীর গায়ে
কতবার হেঁটে গেছি আমি আর রহমান
সে পথে কতবার হেঁটে গেছি দুজনায়।
গোপাট ধরে ফিরে গেছে রাখাল ছেলে
তাঁর গায়ে লেগে গোধূলির ধুলো যত
আমাদের গ্রাম সুসং দুর্গাপুর
আমাদের গ্রাম ছবির বইয়ের মত।
আলপথ যেত গোয়াল পাড়া ধরে
পাশাপাশি যেত গোপাল, তালেব
সেই পথ ধরে সন্ধ্যার উলুধ্বনি
সেই পথ ধরে আজান মাঘরেব্।
ধানখেত গেল কালো কালো ছাই হয়ে
মজা খালে আটকে পড়ল ভেলা
আমাদের গ্রাম জ্বলে গেল একদিনে
আলপথ ধরে ঘনালো কালবেলা।
বাড়ির চালে তখনও লাউয়ের মাচা
পুকুরঘাঠে দুপুরের এঁটো থালা
রহমান ছুটে বাড়ীর দরজায়
"বাঁচতে হলে পালা, শিগগির পালা"
পড়ে রইল একলা সুপুরি গাছ
উঠোনে ছড়ানো কাক-শালিকের দানা
ফাঁকা ঘর, একা কেঁদে কেঁদে ঘোরে
ফেলে আসা একলা বিড়াল ছানা।
সেই পথ-ঘাট, সেই নদী জল
আরও কত মাঠ ডিঙোলাম
আজন্ম চেনা সোমেশ্বরী
আজন্ম চেনা আমাদের গ্রাম।
মা-বাবা দুই বোন সাথে
হেঁটে যাই দূর আরও আরও দূরে
আমাদের মত আরও কত লোক হাঁটে
আমরা যাচ্ছি কাঁটাতার পার করে।
আধপেটা কেউ, কেউ চলে অনাহারে
ধূলোয় লোটায় ছিন্ন মলিন বেশ
আমাদের আর ঘর নেই কোন
আমাদের কাঁটাতার নামে দেশ।
কার বাবা নেই হয়ে গেল
কার মেয়ে হারাল রাস্তায়
এক বোন নিল রাস্তার ধুলোবালি
এক বোন নিল দাঙ্গায়।
কাঁটাতার পেরিয়ে আমরা আসি
পেছনে পড়ে বাড়ি ঘর গ্রাম পাড়া
আমাদের নাম নেই আর কোন
আমাদের শুধু পরিচয় দেশছাড়া।
মরে বেঁচে আরও অজস্র যন্ত্রণাতে
আমাদের দেহ-মন পুড়ে খাক্
আমাদের শুধু রক্ত বিনিময়ে
সন্ততিরা দুধে ভাতে থাক।
কারা তাঁরা, কী নাম ছিল
কাঁটাতারে এসে নাম বদলে যায়
আমাদের পিতৃপুরুষেরাই বারবার
সেই জন্ম থেকে এই জন্মে জন্মায়।
দেশছাড়া হওয়া দেখিনি আমরা
জানিনি কাঁটাতার কত দূর
আমার বাড়ির উঠোন থেকে
হেঁটে গেলে কতটা, সুসং দুর্গাপুর?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন