সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্যামল সোম

সাঁজবেলার রূপকথা

গোধুলি আকাশে রঙে রঙে ভেসে যায় মেঘ, মেঘের ডানা মেলে উড়ে যায় মন সে কোন সাঁজ বেলার রূপ কথায়।
রূপকথার আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক গভীর জীবন বোধ, উপলব্ধি, চির সত্য।

সকাল থেকেই পদ্মের নিশ্বাস ফেলার যেন সময় নেই, আঠারো বছরের গতে যৌবনের ঢল নেমেছে, কিন্তু সব সাধ আহ্লাদ শেষ হয়ে গেছে, বাপ অকালে মারা যেতে কলেরায় বিনা চিকিৎসায়। দুটো গাইগরু ছিলো তাই অসুস্থ মা আর নিজের এই পোড়ার পেটের জ্বালা দু মুঠোতে কোন রকমে টেনে হিঁচড়ে দিন যায়, বাড়ি বাড়ি দুধ বিক্রি করে, গোবরের তাল কুড়িয়ে নিয়ে ঘুঁটে দেয়।
পরের বাড়িতে কাজ করতো কিন্তু এই শরীর -- শরীরই বা সাধলো।
বাড়ির কর্তা, থেকে শুরু করে বার বছরের নাতিটা বুকের ও কাপড় খুলতে চায়।
পুরুষালি যেন ভাদ্র মাসের কুকুর পেছনে পেছনে সব সময়ই ঘুরছে।
ছ্যা ছ্যা এরা ভদ্র লোক? নোলা লক লক করছে, নাল গড়াচ্ছে।
ভয়ে ভয়ে থাকে কে জানে কখন আবার তুলে নিয়ে গিয়ে--?
মেয়ে মানুষের জীবন যৌবন কাল সাপের দংশনে বিষের জ্বালায় প্রাণ যায়।
পদ্ম তাই সারাদিন উদয়াস্ত পশুর মতো খাটেভুতের মতো চেহারা করে রাখে সারা শরীরে গোবর গন্ধ মাখিয়ে রাখে যাতে ফিরেও কেউ ভুল করে তাকায়।
দিনের আলো নিভে আসে, সাঁজের বেলায়, পুকুরে স্নান সেরে, ভালো ধোয়া একটা শাড়ী পড়ে, তেল দিয়ে তার লম্বা চুল আঁচড়ে নেয়। ভাঙা ঘরে মা লক্ষ্মী পটে খুব ভক্তিভরে হাঁটু গেড়ে
ভুঁয়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে।
পদ্ম গলায় আঁচল জড়িয়ে, তুলসী মঞ্চে পিদীম জ্বেলে দেয়, ভূয়ে মাথা হেঁট করে - প্রণাম ভক্তি ভরে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ এ ঝলকে, আকাশ থেকে পড়ে সোনায় বাঁধানো মোড়কে ছোট্ট মুকুর; এই
কী ঈ শ্বরের দান, শোনে উদার্থ আহ্বান : "ওরে পদ্ম তুই ঘুঁটে কুরুনী ঈশ্বরীর বরে ভক্তি জোরে, এখন তুই  অচীন পুরের রাজকুমারী, আজ হতে নাম তোমার পদ্মাবতী।
ঐ স্বর্ন মুকুরে দিকে চেয়ে তুই যা চাইবি,
যা দেখবি, তোর সকল বাসনা সফল হবে।
কিন্তু খবরদার ! কখ্খনো অবিশ্বাস
করবি না, বিশ্বাসে অভাবে শেষে
জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবি, ঈশ্বরের অভিশাপে।"
করজোড়ে, প্রার্থনা করে, "হে ভগবতী তোমার কৃপা যোগ্য কি আমি, এ কী শুনলাম ? প্রণাম নাও মা।
অনেকক্ষণ স্বর্ণমুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে, শেষে এক সময়ে কম্পিত হৃদয়ে, বিস্মৃত নয়নে শিহরিত হয়, পদ্ম অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, ঐ সেই শোনা আকাশ বাণী, ভীষণ সর্ন্তপনে ধীরে ধীরে উঠিয়ে মুকুর,
আয়নায় পদ্ম নিজেরে দেখে, এত রূপ
এত লাবণ্য, স্নিগ্ধ মাধুরী মেশানো
অপরূপ রাজ কুমারীর বেশ,
স্বর্ন খচিত বসনে, হীরা মনি
পান্না চূনী আর মুক্তার নানা
অলংকারে ভুষিতা আজ পদ্মাবতী।
মাটির ঘর, খোলায় খড়ে ছাওয়া, এক চিলতে জমিতে একটি রক্ত
জবা, দু-টি বেল যূঁই, ঐ রক্ত করবী বাপের লাগিয়ে যাওয়ায় গাছ,
মায়ের শেষ চিহ্ন এই আতা গাছ, সে গাছে এখন দেখে তোতা শীষ
দিয়ে দোল খায়, মাটির কুঁড়ে ঘর বদলে গেছে, এখন দাঁড়িয়ে এখন বিশাল প্রাসাদ;
প্রাসাদ সংলগ্ন উদ্যানে সেই রক্ত করবী গাছে থোকা থোকা লাল
রক্ত করবী ফুঁটে আছে, অস্ট সখী দাস দাসী ছুটে আসে;
প্রাসাদের সিংহ বিশাল ফাটকে দ্বার রক্ষী প্রহরী যত, তারা উঠে দাঁড়িয়ে নত মস্তকে কুর্নিশ জানায়।
মহলে পর মোহল পার হয়ে, সুগন্ধি নানা উপকরনে বসরাই গোলাপ
জলে দাসীরা স্নান করায় বিশাল এই মোতি মহলের স্নানাগারে।
সোনার থালায় নানা খাবার, ফল খেয়ে রূপো পালংকে শুয়ে,
সোনার মুকুরের দিকে তাকিয়ে ভাবে আমার স্বপ্নের রাজপুত্র এসো।
সাদা ঘোড়ায় চেপে নীল কুমার ছুঁটে আসছে, পথ আগলে আছে
এক বিরাট দৈত্য খুব লড়াই হচ্ছে, যেই দৈত্য তরোয়ালের এক
কোপ বসিয়েছে, পদ্মাবতী ডুগড়ে কেঁদে উঠল, "হায় ! হায়! ঈশ্বর
এ তুমি করলে ? আমার স্বপ্নের রাজপুত্র আর এলো না !"
আকাশ বাণীর হুংকার ধ্বনি শোনা গেল, তীব্র ভৎসনা করে উঠলো,
"কী ঈশ্বরে অবিশ্বাস !
মূহুর্ত পদ্ম দেখে সে তার পুরোনো কুঁড়ে ঘরে ছেঁড়া
কাঁথায় শুয়ে রয়েছে। ঈশ্বরে অবিশ্বাসএলো অভিশাপ।

মন্তব্যসমূহ

বাংলা সাহিত্য : জনপ্রিয় কবিতাগুলো পড়ুন

শুভাগত রায়

audio testing  শুনুন কবি-কন্ঠে কবিতা পাঠ : সুসং দুর্গাপুর রোদ এসে পড়ে সোনা ধানখেতে সারি সারি কত আম কাঁঠালের গাছ সোনালী রোদ মাখে নদীর জল আদুরে জল স্ফটিক স্বচ্ছ কাঁচ।

কাজল সেনের কবিতা

রাতের শেষ ট্রেন কাজল সেন ঠান্ডাঘরে বসে টানা কমপিউটারে কাজ করে যারা নির্ঘাত তাদের ঘাড়ব্যথা হাতব্যথা স্পন্ডেলাইটিস অথচ আমাদের ক্লাবের তুখোড় সেন্টার ফরোয়ার্ড গান্ধী মন্ডল সারাটা মাঠ জুড়ে ড্রিবলিং ট্যাকেলিং পাসিং খেলে আজ অষ্টিও আর্থারাইটিসে পুরোপুরি শয্যাশায়ী ইদানীং আর কোনো উৎপাতেই জাগে না মন ঘোড়ার দানাপানি থেকে টয়েটো গাড়ির পেট্রল উন্মুক্ত ডাইনিং টেবিলে রাখা পিৎজা বা বার্গার রাতে স্বল্পাহারের পর স্বল্প মদ্যপান দোয়াতের কালি আজকাল আর কেউ ব্যবহার করে না ডটপেনে চিঠি লেখাও বন্ধ হয়ে গেছে বহুদিন সেই যে কবে কতদিন আগে গোলপোস্টে শেষবারের মতো দাঁড়িয়েছিলেন দীর্ঘদেহী পিটার থঙ্গরাজ আর রঞ্জিক্রিকেটে শূন্য রানে ক্যাচ তুলে শেষবারের মতো কীনান স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে ফিরেছিলেন পঙ্কজ রায় আর তো হবে না এ জীবনে নতুন পয়সার লেনদেন শুধু প্রতীক্ষায় আছি কবে টাটানগর ছেড়ে রওয়ানা হবে রাতের শেষ ট্রেন

বিভীষণ মিত্রের কবিতা

বিভীষণ মিত্রের কবিতা পুনর্জন্ম বিভীষণ মিত্র আর একবার যদি জন্মাতে পারি, নতুন করে ভালবাসবো তোমাকে। বিভক্ত পথ ছেড়ে আবার চলব একই পথে, যদি তুমি ফিরে আসো ভুল গুলো ভুলে, আকাশের ওপার থেকে মেঘ ছুঁয়ে বৃষ্টি নামাব। জোনাকির ক্ষুদ্র আলো থেকে চাঁদের বৃহৎ জ্যোৎস্না নামাব। নবজাতকের মত পাপশূন্য হয়ে - তোমার মুক্ত হাতে-হাত রাখব। আর একবার যদি জন্মাতে পারি, তোমায় ভালবেসে বাঁচার মত বাঁচব। মোহনা হয়ে নদী,নদী হয়ে সাগর নামাব। সাগরের সুনীল জলরাশি হয়ে তোমার নগ্ন পা ছোঁব। সেই সিক্ত পায়ের শিহরণে- তোমার শিরা-উপশিরায় জানাবো আমার ভালবাসার কথা। যদি ভালবাসি এ কথা বল আমাকে ভুল করে, পরজনমে কৃতদাস হব তোমার ভালবাসার ছায়া তলে।